• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

উত্তরের চার জেলার সাথে রংপুরের বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

  • ''
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নীলফামারী প্রতিনিধি:

পাঁচ দিন ধরে রংপুর থেকে উত্তরের চার জেলার সাথে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। দিনাজপুর ও রংপুর জেলা মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত রংপুরের এবং সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও বাস চলাচল করছে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নীলফামারী বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শানু।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রংপুরে চিকিৎসক দেখাতে রওনা হন আনারুল হক (৩০)। রংপুরের গেটলক বাসে উঠে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে সরাসরি বাস চলাচল না করায় সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে তাকে নামিয়ে দেন। এরপর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালের অপর প্রান্তে গিয়ে উঠেন রংপুরে বাসে।তিনি জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রী ছায়মা বেগমকে ভর্তি করেই বাড়ি ফিরে যাবেন তিনি। কিন্তু বীরগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোনো গাড়ি না থাকায় আবারো দূর্ভোগে পড়বেন। হঠাৎ কেন গাড়ি বন্ধ হয়েছে তা কেউ জানেও না।পঞ্চগড়ে যাওয়ার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যাত্রী রওশন আরা বলেন, ‘রংপুরের কোনো গাড়ি সৈয়দপুর পার হচ্ছে না। সৈয়দপুরের টিকিট পেতেও খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সিটও পাওয়া যাচ্ছে না, খুব হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শুনলাম গাড়ির মালিক সমিতির কি জানি সমস্যা হয়েছে, তাঁর সাজা আমার মতো যাত্রী সাধারণকে ভোগাতে হচ্ছে। দেশে কোনো কিছুর সিস্টেম নেই। সাধারণ মানুষ জিম্মি।’

নীলফামারীর সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে গিয়ে আরো দেখা যায়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর থেকে যেসব বাস গেটলক রংপুরে চলাচল করতো, সেগুলো সৈয়দপুরে সব যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। আবার সৈয়দপুর থেকে তাঁরা যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন। একইভাবে রংপুর থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃজেলা বাসের কোনো বাসকে সৈয়দপুর অতিক্রম করতে দেখা যায়নি।সেগুলোও সৈয়দপুর থেকে যাত্রী উঠানা করছেন। এতে চাপ বেড়েছে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে। এতে দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন নীলফামারী জেলা বাস, মিনিবাস মালিক সমিতি। দিনাজপুর ও নীলফামারী বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পঞ্চগড় থেকে রংপুর হয়ে বগুড়া ও রংপুর থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি হয়ে জয়পুরহাট পর্যন্ত চলাচলের কথা। কিন্তু রংপুরের নেতারা পঞ্চগড় থেকে বগুড়ায় বাস চলাচল করতে না দিয়ে তাঁরা রংপুর থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি দিয়ে জয়পুরহাট রুটে তাদের বাস চলাচল করতে চায়।

আর এ নিয়ে দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও রংপুর মটর মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এর ফলে রোববার থেকে উভয় গ্রুপ সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচল করে। ফলে নীলফামারীর সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠানামা চলছে।

সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে কথা হয় রংপুরের গুপ্তপাড়া বাসিন্দা ব্যবসায়ী মীর আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীক কাজে পঞ্চগড়ে প্রায় যেতে হয়। কিন্তু ভেঙে যেতে হচ্ছে। বাস পাওয়ায় যাচ্ছে না।’ রংপুর থেকে পরিবার নিয়ে দিনাজপুরে যাচ্ছিলেন মাহিগঞ্জের রতনা বেগম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রংপুর থেকে দিনাজপুর গেটলক গাড়িতে আরামে কম খরচে যাওয়া যেত। এখন ভেঙে যেতে বেশি টাকা লাগছে। বলা চলে প্রায় দ্বিগুন। মালিকদের ঝামেলা হবে আর সেগুলো আমাদের মতো যাত্রীদের ঘারে পড়বে। এগুলো কি দেখার কেউ নেই।’

রফিকুল ইসলাম নামের একজন মোটর শ্রমিক বলেন, চার জেলার গাড়ি এখন সৈয়দপুরে যাত্রী উঠানা করছে। স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ ভীড় বাড়ছে। গাড়ির চাপ, যাত্রীর চাপ খুবই বেশি। তিনি মনে করেন, ঠুনকো বিষয় নিয়ে এই ঝামেলা। মালিক সমিতিগুলো ইচ্ছে করলে দুই মিনিটে সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ভবানী শংকর আগরওয়ালা বলেন, সৃষ্ট ঘটনার জন্য রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপন সম্পুর্ন দায়ী। তাঁর হঠকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টাই এ উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তবে রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads